এই সিনেমাটি তৈরি হওয়ার পেছনে , কিন্তু একটি বাংলা ছবির অবদান আছে। তপন সিন" />

“ডন: সিনেমা ইতিহাসের মুগ্ধকর ছড়ি”

"an old movie poster with the title don't stop"

ছবিটা শেয়ার করেছেন খোদ অমিতাভ বচ্চন। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া “ডন” সিনেমার অ্যাডভান্স টিকিট কাটার জন্য একমাইল লম্বা দর্শকদের সারি সিনেমা হলের সামনে।

এই সিনেমাটি তৈরি হওয়ার পেছনে , কিন্তু একটি বাংলা ছবির অবদান আছে। তপন সিনহার করা ছবি “ক্ষণিকের অতিথি।” ১৯৫৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল।

ছবি পেছনের অনুপ্রেরনাঃ

১৯৭২ সালে, তপন সিনহার পরিচালনায় মুক্তি পেল জিন্দেগি জিন্দেগি ছায়াছবিটি। “ক্ষণিকের অতিথির ” হিন্দি রিমেক। সুনীল দত্ত, ওয়াহিদা রহমান, অশোক কুমার, ফরিদা জালাল ছিলেন অভিনয়ে। সঙ্গীত পরিচালনা শচীন দেব বর্মন। গান গেয়েছেন মান্না দে, কিশোর কুমার ,লতা মঙ্গেশকর এমনকি খোদ শচীন দেব বর্মন। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালনার জন্য জাতীয় পুরস্কার অবধি পেয়েছিলেন শচীন দেব বর্মন।

কিন্তু …

রোমান্স , গ্রামের আদর্শবাদী ডাক্তার,বিধবা নায়িকা শিশু পুত্র সহ , জাতপাত ইত্যাদির উপর ভর করে তৈরি ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়ল জনতার দরবারে।

বইটির প্রোডিউসার ছিলেন নরিমান ইরানি। পার্সি ভদ্রলোক। সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে ভালো নাম ছিল। সেই ভূমিকায় কাজ করা কিছু সিনেমার নাম হচ্ছে, ফুল আউর পাত্থর, শোর, ছয়লা বাবু, ইমান ধরম ইত্যাদি। জীবনে প্রথম প্রডিউস করতে নেমেছিলেন এই সিনেমাটি।

সিনেমাটি ফ্লপ করে নিজেরও আর্থিক অবস্থার বারোটা বেজে গেলো। সেই বাজারে তখন তার ধার প্রায় বারো লাখ টাকা।

দিশেহারা অবস্থা । কাজ করছেন তখন “রোটি কাপড়া ঔর মোকান” ছবিটিতে। কাজের সূত্রেই পরিচয়, অমিতাভ বচ্চন, জিনাত আমান, চন্দ্র বারটের সঙ্গে। ইরানির অবস্থা দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন এরা সবাই। বললেন , আরো একটা সিনেমা বানাতে এগিয়ে আসতে। আশ্বস্ত করে বললেন, ছবি ফ্লপ হলে কেউ একটি পয়সা নেবেন না। নায়ক নায়িকা ঠিক হয়ে গেলো, পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন চন্দ্র।

গল্প ও চিত্রনাট্যঃ

এবার গল্প খোঁজার পালা। স্ত্রী সালমা ইরানির সঙ্গে পরিচয় ছিল তখনকার চিত্রনাট্য রচনার নামকরা জুটি সেলিম জাভেদের। তারাই দিলেন চিত্রনাট্য, ওই একই সর্তে। ফ্লপ হলে এক পয়সা নেবেন না।

তবে চিত্রনাট্য সম্পর্কে বলার কথা একটু আরো আছে। তখনকার অনেক বড় বড় নায়করাই এই চিত্রনাট্যটি শুনেই নাকচ করে দিয়েছিলেন।

চিত্রনাট্যটি শোনাবার সময় সেলিম জাভেদ বলতেন, “ডনের গল্প। ” নরিমনের নামটি খুব পছন্দ হয়। পছন্দ হয়েছিল অমিতাভ বচ্চন , চন্দ্র দুজনেরই। শুধু মনোজকুমার শুনে অল্প আপত্তি করেছিলেন।

গান রাখার পরামর্শঃ

স্ক্রিপ্টের একটু পরিবর্তন নরিমন করেছিলেন শুটিং চলাকালীন। চন্দ্র কাজ শিখেছেন মনোজ কুমারের কাছে। চন্দ্র তার সঙ্গে আলোচনা করতেন আর কি করা যায় বলে। মনোজ কুমার জোর দিয়েছিলেন এই একশন বহুল সিনেমায় ছবির দ্বিতীয় ভাগে, হালকা চটুল সুরের একটি গান রাখতে। কল্যাণজী আনন্দজীর সুরে “খাইকে পান বেনারস ওয়ালা” গানটি সিনেমায় আসার পেছনে, সে হিসেবে হাত আসলে মনোজ কুমারের।

এই গানটি নিয়ে অবশ্য আরও মজার তথ্য আছে। গানটি বানানো হয়েছিল দেবানন্দ সাহেবের বই “বেনারসি বাবু”র জন্য। সেখানে শেষ মুহূর্তে ব্যাবহার করা যায় নি। আর অমিতাভের এই গানটির সঙ্গে নাচের মুভমেন্ট… অনেক বছর পর একটি সাক্ষাৎকারে অমিতাভ বলেছিলেন, ছেলে অভিষেকের ছোটবেলার নাচের মুভমেন্ট থেকে তিনি বেশ কিছু স্টেপস কপি করেছিলেন।

প্রযোজকের মৃত্যুঃ

সিনেমাটি করার কথা ভাবাই হয়েছিল নরিমান ইরানির ঋণ শোধ করার ব্যবস্থা করে দিতে। দুঃখের ব্যাপারটা হলো, শুটিং চলাকালীন এক দুর্ঘটনায় ভদ্রলোকের মৃত্যু হয়ে গেলো। মুম্বাই তে রাজকমল স্টুডিওতে কাজ করছিলেন নভেম্বর মাসে, হটাৎ মেঘ ভেঙে বৃষ্টি। একটা দেওয়াল ভেঙে তার উপর পড়ে গেলো। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু শেষরক্ষা হয় নি। ১০ ডিসেম্বর ,১৯৭৭ সালে ওই হাসপাতালেই মারা গেলেন তিনি।

প্রোডিউসারের মৃত্যু হলেও চন্দ্র শুটিং বন্ধ করেন নি। ছবির শিল্পীরা তখন বিখ্যাত। তারাও ডেট দিয়েছেন। বাজেট ছিল পঁচিশ লক্ষ টাকা। কোনমতে সেই টাকায় শুটিং শেষ করে বই রিলিজের জন্য তৈরি হয়ে গেলো। সময় লেগেছিল সাড়ে তিন বছর।

বিজ্ঞাপন করার টাকা ছিল না। সব মিলিয়ে ১২০টি প্রিন্ট তৈরি করে হলে রিলিজ করা হয়েছিল। সিনেমাটি প্রথমে তেমন চলে নি। সবাই ভেবেছিল ফ্লপ করেছে।

কিন্তু কয়েকদিন পর, সিনেমার একটি গান খুব বিখ্যাত হতে শুরু করলো। এবং তারপর সেই গানটির দৌলতে সিনেমাটি। কোন গানটি… সেটি আর এখানে বলছি না। সে সমন্ধে আগেই লিখেছি।

শেষ করার আগে ভাল খবর

এই বইয়ের লাভের টাকা, চন্দ্র তুলে দিয়েছিলেন, নরিমন ইরানির স্ত্রী সালমা ইরানির হাতে। তার স্বামীর ঋণ পরিশোধ করার জন্য।

No Comments Yet

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Verified by MonsterInsights