পরিচালকেরা জানান, নির্বাচন ঘিরে প্রতিবারই সদস্যদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। নির্বাচনে প্রার্থী হলেই তাঁদের নিয়ে শুরু হয়ে যায় নানা সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক, গ্রুপিং। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। এ জন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংগঠনমুখ" />

ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন ঘিরে তর্ক-বিতর্ক

"a group of people standing together in front of a building"

পরিচালকেরা জানান, নির্বাচন ঘিরে প্রতিবারই সদস্যদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। নির্বাচনে প্রার্থী হলেই তাঁদের নিয়ে শুরু হয়ে যায় নানা সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক, গ্রুপিং। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। এ জন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংগঠনমুখী হতে চান না অনেকে।

পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, এই মান-অভিমান নতুন কিছু নয়। এসব কারণে এবারও নির্বাচন থেকে সরে গেছেন একাধিক সাংগঠনিক কাজের যোগ্য নির্মাতা। ১০ মার্চ নির্বাচন তার আগেই ভোটারদের প্রশ্ন, নির্বাচন কতটা আগ্রহ জাগাতে পারবে।

কমিটি মেয়াদঃ

জানা যায়, মেয়াদ শেষ হলেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের নির্বাচনে তেমনটাই দেখা গেছে। কিন্তু এবার তা না করে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে নির্বাচন।

সেই সভায় একাধিক পরিচালক সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেউ কেউ বলেন, নির্বাচনে গত দুই বছর তেমন কোনো কাজই হয়নি।

যে কারণে দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন নির্বাচিতরা। কেউ কেউ বলেন, সেই ব্যর্থতার দায়ও কিছুটা নিয়েছেন নেতারা। নির্বাচিত নেতাদের বক্তব্য, করোনার মধ্যে কাজ শুরু করতেই বিলম্ব হয়। তারপরও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

পক্ষ বিপক্ষঃ

সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘আমি তো এখনো দায়িত্বে আছি। এসব নিয়ে আমার কথা বলা ঠিক হবে না। নির্বাচনের পর নতুন কমিটির শপথের মধ্য দিয়ে আমাদের দায়িত্ব শেষ হবে।

তবে শুধু এটুকু বলব, কাজ করতে গেলে পক্ষ-বিপক্ষ বিতর্ক হবেই। ১০ জন থাকলে কেউ কেউ অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলবেনই। একটা রানিং কমিটির যে স্বপ্ন, পরিকল্পনা থাকে, সেই মোতাবেক অনেক সময় কাজ করা হয়ে ওঠে না, কখনো হয়।

সাধারণ কমিটিতে সেসব নিয়েই কথা হয়েছে। আমরা এটা বুঝেছি, নির্বাচিত করে দেওয়ার পর সবার মন রেখে কাজ করা কঠিন। আমরা চেষ্টা করেছি, কিছুটা পেরেছি, কিছুটা পারিনি। কেউ কেউ তড়িঘড়ি বললেও নিয়ম মেনেই সব করছি।’

নির্বাচন বর্জনঃ

কেউ কেউ অভিযোগ করে জানান, সংগঠনটির নির্বাচন যেভাবে হয়, সেখানে ভালো সংগঠকেরা নির্বাচন করতে চান না। গতবারও অনেকেই নির্বাচন থেকে সরে যান।

এ ধারাবাহিকতায় এবার নির্বাচনের ইচ্ছা থাকলেও শিহাব শাহীন, সকাল আহমেদ, ইমরাউল রাফাত, হৃদি হক, বান্না, পিকলু চৌধুরী, তুহিন হোসেন, ইমেল হক, ফেরারি অমিত, নিয়াজ চন্দ্রদ্বীপ, গোলাম মুক্তাদিরসহ অনেকেই শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যান।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন নিয়ে আশার জায়গাটা আর নেই। কেউ কেউ নির্বাচন বর্জন করেছেন। তাঁদের কথা, মান-অভিমান ও স্বার্থের দ্বন্দ্বকে কেউ কেউ সামনে আনছেন, যা শিল্পীদের এই নির্বাচনে কাম্য নয়।

পরিচালক তুহিন হোসেন বলেন, ‘যাঁরা সংগঠনে কাজ করে চান, তাঁরাই এবার নির্বাচন থেকে দূরে। এটা প্রমাণ করে, নির্বাচন থেকে তরুণদের আস্থা উঠে যাচ্ছে। সংগঠনের অনেকেই চাচ্ছিলেন, গাজী রাকায়েত ভাই, মাসুদ হাসান, অনিমেষ আইচদের মতো সাংগঠনিক ব্যক্তিদের নির্বাচনে নিয়ে আসতে।

কিন্তু সুস্থ পরিবেশ আর মানসম্মানের ভয়ে যোগ্য অনেকেই সংগঠন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সাংগঠনিক মানুষেরা না থাকায় দিন দিন সংগঠনটি ভেঙে পড়ছে।’

মনোমালিন্যঃ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিচালক বলেন, নির্বাচনে ভোটাররা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন না। নিয়মিত আর অনিয়মিত কাজ করেন, এমন পরিচালকের মধ্যে এখন গ্রুপিং হয়। নিয়মিত কাজ করেন, এই সংখ্যা খুবই কম।

অনিয়মিত কাজ করেন, তাঁরা একজোট হয়েছেন। তাঁদের কথা, নিজেদের মধ্যে কাউকে নির্বাচিত করে সবার কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবেন। কিন্তু যিনি নিজেই কাজ পান না, তিনি কীভাবে অন্যকে কাজ দেবেন।

এগুলো নিয়ে মনোমালিন্য সব সময়ই হচ্ছে। যে কারণে সংগঠনটি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

এ বছর নির্বাচনের জন্য সাধারণ সভায় উত্থাপন করা হয়েছিল সিলেকশন প্রক্রিয়া। কিন্তু বেশির ভাগ সদস্যই নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন। যে কারণে বর্তমান কমিটিকে সিলেকশন প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছে।

নির্বাচনে সমিতির খরচও বাড়বে। সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘সিলেকশন হলেও খারাপ কিছু হতো না। সংগঠন প্রথম যখন শুরু হয়, তখন সিলেকশন প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু হয়েছিল।

সবার মত নিয়ে এটা করা যেত। কিন্তু সদস্যরা নির্বাচনে আগ্রহী, এখানে আমাদের কিছু বলার থাকে না।’

ছোট পর্দার নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচনে সভাপতি পদে পরপর দুইবার জয়ী হয়েছেন সালাহউদ্দিন লাভলু। নিয়মমতো তিনি এবার নির্বাচন করতে পারছেন না।

প্রতিদ্বন্দিতাঃ

অন্যদিকে পরপর দুইবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ছোট পর্দার নির্বাচন থেকে সরে বড় পর্দার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এস এ হক অলিক। সেখানে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।

সর্বশেষ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এবার ছোট পর্দার এই সংগঠনের সভাপতি পদে লড়বেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পদপ্রার্থী অনন্ত হিরা। সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন করছেন কামরুজ্জামান সাগর।

তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ফরিদুল হাসানের সঙ্গে। এ ছাড়া সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি ১০ পদে লড়বেন ৩২ জন পরিচালক। জয়ী হবেন ১৯ জন।

সভাপতি পদ প্রার্থী এস এ হক অলিক নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘যাঁরা বিগত দিনে সংগঠনকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়েছেন, গোছানোর চেষ্টা করেছেন, নানাভাবে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের সংগঠনে দরকার ছিল।

আবার নতুনেরা আগামী দিনের কান্ডারি। নতুন-পুরোনো মিলেই আমরা সংগঠনের জন্য কাজ করে যাব।

আমরা আশা করছি, মান-অভিমান ভুলে সবাইকে নিয়ে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সবাই মিলে সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

No Comments Yet

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Verified by MonsterInsights