রবীন্দ্রনাথ নাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে- একদা সোস্যাল মিডিয়া এই জগতে এসে গণহারে রাজার অনুভব বিলি করতে পারে- তখন ভাবনায় আসবার কথা নয়।
বহুকাল আগে লিখলেও আগের মানুষেরা সে গান, কবিতার অন্তর্গত মানে উপলব্ধি করে আনন্দিত, অনুপ্রাণিত হয়েছে। বোধ বিবেচনায় খামতি থাকলে ভাঙ্গা কেদারায় বসে বা ছেঁড়া কাঁথায় চিৎ কাৎ হয়ে শুয়ে রাজা আমি, আমিই রাজা- এমন হালুম হুলুম করা স্বভাবের তখন জন্ম হয়নি।
হাতে ফোন থাকলে এখন যে কেউই রাজা। ফোন টেপা মানে রাজদণ্ড ঘোরানো। জ্ঞান, বিবেক, বোধ ঠিকানা বদলেছে। ওসব এখন মগজ থেকে সুড় সুড় করে নেমে টগবগ করে ফুটছে মানুষের বুড়ো আঙুলে।
রাজা হওয়ার সাধ সকল মনেই থাকে, সবার থাকেনা সাধ্য। সাধ্য কার আছে, কার নেই- ভেবে দেখার মানুষ কম হয়।
কাকের ময়ূর হতে চাওয়ার গল্প মানুষের বানানো। বিড়াল হতে চায়না কুকুর- তালগাছ হতে চায়না বট বা কাঁঠালগাছ। সাপ ব্যাঙ বানর- যে যা- তাতেই সন্তুষ্ট। কেবল মানুষই অসন্তুষ্টপ্রাণ। যা নয়, তা ই হয়ে দেখিয়ে দিতে চায়।
যোগ্যতা না থাকলেও অর্জন করবার ইচ্ছা এবং সাধ্য- দুটো শক্তিই দেয়া হয়েছে মানুষকে। দায়িত্ববান মানুষ অশেষ চেষ্টায় “নেই” কে “আছে” বানিয়ে নিতে পারে।
চেষ্টা ছাড়া, ঘাম না ঝরিয়ে যারা নিজেদের রাজার আসনে দেখে, গাছ না লাগিয়ে ফল ভোগ করতে চায়- এমন শরমহীন, দায়হীন মানুষের সংখ্যাই জগতে বেশী। যারা এমন, তাদের পিছনে বিপুল সংখ্যক দায়হীন প্রজা জড়ো হয়ে জয়ধ্বনি দেবে- এটাই স্বাভাবিক।
অস্বাভাবিকতা হচ্ছে, কার পিছনে কতো মানুষ জড়ো হলো সেই সংখ্যা গণনা করে মানুষের যোগ্যতা বিচার করা। গায়ক এবং অগায়ক, গুণী গুণহীন- কার জন্য কত তালি বেজেছে, তা গণনা করে সম্মানিত বোধ করা, সন্মান পাওয়া খুবই করুণ কাণ্ড।
এমন বেদনাদায়ক কাণ্ড আমাদেরকে প্রবল সুখী করে। ভয়ানক অসুখ যখন ফুরফুরে সুখদান করে- বুঝতে হবে আরও সর্বনাশা, অতি দুঃসহকাল আমাদের দরোজায় দরোজায় কড়া নাড়তে দৌঁড়ে আসছে।
বিদ্রঃ আফজাল হোসেনের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া।